মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ - জনপ্রিয় কিছু ঔষধের তালিকা

মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ নিয়ে চিন্তিত? পুকুর বা অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছের গায়ে ঘা দেখলে মনটা যে খারাপ হয়, তা আমি বুঝি। কিন্তু ভরসা রাখুন, সঠিক ঔষধ আর পদ্ধতি জানা থাকলে এই রোগের প্রতিকার সম্ভব। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি কোন ঔষধ কখন কীভাবে ব্যবহার করবেন, যাতে আপনার মাছ দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।

মাছের-ক্ষত-রোগের-ঔষধ

রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে মাছের ক্ষত রোগের লক্ষণগুলো চিনে ফেলা খুবই জরুরি। কারণ সঠিক সনাক্তকরণই সফল চিকিৎসার প্রথম ধাপ। এখানে আপনি রোগের স্পষ্ট লক্ষণগুলো জানতে পারবেন এবং প্রতিরোধের উপায়গুলোও বলে দেওয়া হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এই সমস্যায় কম পড়েন। আপনার মাছের সুস্থ জীবন ফিরিয়ে আনার পথ এখানেই শুরু।

পোস্ট সূচীপত্রঃ মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ ও জনপ্রিয় কিছু ঔষধের তালিকা

মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ ও জনপ্রিয় কিছু ঔষধের তালিকা

মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ সম্পর্কে হয়তো আপনারা অনেকেই কমবেশি জেনে থাকবেন। প্রিয় পাঠক, মাছ চাষের মতো একটা সুন্দর কাজ যখন মন দিয়ে করেন, তখন ছোটখাটো সমস্যাতেও বুকটা ধুকপুক করে ওঠে, তাই না? আর যদি সেটা হয় মাছের ক্ষত রোগের মতো কিছু, তাহলে তো আর কথাই নেই। সত্যি বলতে, এই রোগ যেকোনো মাছ চাষির কাছেই একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ, একটা চিন্তার কারণ। আমি নিজেও যখন পুকুরে বা অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছের গায়ে এমন ক্ষত দেখি, তখন ভেতরে কেমন যেন একটা কষ্ট অনুভব করি। আপনারা হয়তো খেয়াল করেছেন, এই রোগে আক্রান্ত মাছের শরীরে প্রথমে ছোট ছোট দাগের মতো হয়, যা ধীরে ধীরে বড় গোলাকার ক্ষতে পরিণত হয়।

দেখে মনে হয় যেন কেউ ছুঁচ ফুটিয়েছে, তারপর সেটা গভীর হতে হতে একেবারে মাছের মাংস পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পুকুর হোক, দিঘি হোক বা বাড়িতে রাখা শখের অ্যাকুয়ারিয়াম - এই সমস্যাটা যেকোনো জায়গায় দেখা দিতে পারে। আর হ্যাঁ, যদি আমরা সময় থাকতে এর সঠিক চিকিৎসা না করি, তাহলে কিন্তু অনেক প্রিয় মাছকেই আমরা হারাতে পারি। ব্যাপারটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং সঠিক পরিচর্যা পদ্ধতি জানা থাকলে এই মাছের ক্ষত রোগের প্রতিকার করা সম্ভব। হ্যাঁ, চিন্তার কালো মেঘ সরিয়ে আমরা চাইলে এই রোগকে জয় করতে পারি। আসুন সবার প্রথমে আমরা মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ দেখি নেই, তারপর সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

  • পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট
  • লবণ (সাধারণ ও আয়োডিন মুক্ত)
  • ফরমালিন
  • মেথিলিন ব্লু
  • অক্সিটেট্রাসাইক্লিন
  • এন্টিবায়োটিক (যেমনঃ অক্সিলিন, টেরামাইসিন)
  • ম্যালাকাইট গ্রিন
  • কপার সালফেট
  • পভিডন আয়োডিন
  • হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড
  • ক্লোরামিন-টি

মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর সঠিক ব্যবহার ও সতর্কতা

আচ্ছা, তো আমরা যখন মাছের ক্ষত রোগের মতো একটা কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ি, তখন মনে হয় কী করলে বাঁচানো যাবে আমার মাছগুলোকে, তাই না? এই সময় আমাদের হাতে কিছু কার্যকরী হাতিয়ার থাকা খুব দরকার। তেমনই একটা খুব পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য জিনিস হলো পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, যার বৈজ্ঞানিক নামটা হলো KMnO4। নামটা শুনতে একটু জটিল হলেও, এটা কিন্তু মাছের অনেক রকম সমস্যার সমাধান দিতে পারে, বিশেষ করে আমামাছেরদের  এই ক্ষত রোগ আর অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এটা বেশ ভালো কাজ দেয়। আমার নিজেরও যখন এমনটা হয়েছে, এই জিনিসটা খুব ভরসা জুগিয়েছে। তবে এটা ব্যবহারের কিছু নিয়মকানুন আছে, আর সেগুলো মেনে চলাটা ভীষণ জরুরি। একদম সহজভাবে বলিঃ 

  • পরিমাণটা খুব জরুরিঃ একশ লিটার পানির জন্য মাত্র ২ থেকে ৩ গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটই যথেষ্ট। এর বেশি কিন্তু কখনোই নয়! মনে রাখবেন, ওষুধের সঠিক মাত্রা জীবন বাঁচাতে পারে, আবার ভুল মাত্রা বিপদ ডেকে আনতে পারে।
  • ব্যবহার পদ্ধতিঃ প্রথমে একটা বালতিতে বা অন্য কোনো পাত্রে পানি নিয়ে তাতে মেপে রাখা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটটা ভালো করে গুলে নিন। দেখবেন পানির রং বেগুনি হয়ে যাবে। এরপর এই মেশানো পানিটা পুকুর বা ট্যাংকের যেখানে মাছ আছে, সেখানে সাবধানে ছড়িয়ে দিন।
  • কতোদিন ব্যবহার করবেনঃ সাধারণত এই পদ্ধতিটা ৭ থেকে ১০ দিন টানা চালিয়ে যাওয়া ভালো। এতে রোগের জীবাণুগুলদমন করা যায়।  

কিন্তু কিছু জরুরি কথা একদম ভুলে গেলে চলবে না

সবার আগে একটা কঠিন সত্যি বলি যদি এই পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট পরিমাণ একটুও এদিক ওদিক হয়, মানে যদি বেশি ব্যবহার করে ফেলেন, তাহলে কিন্তু আপনার মাছগুলোর জন্য সেটা মারাত্মক হতে পারে, এমনকি মারাও যেতে পারে! এটা ভাবলেই আমার গা শিউরে ওঠে। তাই অনুরোধ করছি, যখনই ব্যবহার করবেন, মেপে পরিমাণটা ঠিক রেখে ব্যবহার করবেন। এটা খুবই শক্তিশালী একটা জিনিস। আর একটা কথা, এটা ব্যবহারের পর অবশ্যই, অবশ্যই আপনার হাতটা সাবান দিয়ে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। নিজেদের সুরক্ষাটাও তো সমান গুরুত্বপূর্ণ, তাই না? তথ্যসূত্রঃ অ্যাকোয়াকালচার ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজিস, ওয়ার্ল্ড অ্যাকোয়াকালচার সোসাইটি

মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ লবণ এর সঠিক ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক উপকারিতা

আচ্ছা, রাসায়নিক ওষুধের কথা তো শুনলাম। কিন্তু জানেন তো, আমাদের হাতের কাছেই এমন কিছু জিনিস থাকে যা হয়তো আমরা ভেবেই দেখি না, অথচ সেগুলো মাছের অনেক সমস্যার সমাধান দিতে পারে! তেমনই একটা দারুণ জিনিস হলো সাধারণ লবণ। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, আমাদের রান্নাঘরের সেই লবণ! তবে এখানে একটা ছোট্ট বিষয় মনে রাখবেন, মাছের জন্য আমরা যেটা ব্যবহার করবো, সেটা যেন আয়োডিন-মুক্ত হয়।

আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয়, প্রকৃতি যেন আমাদের কতভাবেই সাহায্য করে। এই সাধারণ লবণটাই দেখুন না, মাছের শরীরের যে ক্ষতগুলো হয়, সেগুলো সারিয়ে তুলতে এটা একদম প্রাকৃতিক উপাদানের মতো কাজ করে। আর সবচেয়ে ভালো দিকটা হলো, এটা খুব সহজেই পাওয়া যায় আর দামও কিন্তু একেবারেই কম। এই গুণগুলোর জন্যই এটা আমার খুব পছন্দের একটা পদ্ধতি।

এই লবণ ব্যবহারের কয়েকটা সহজ উপায় আছে

  • পুকুর বা ট্যাংকের জন্য --- যদি পুরো পুকুর বা ট্যাংকের মাছের সমস্যা হয়, তাহলে প্রতি ১০০ লিটার পানিতে প্রায় ১ থেকে ২ কেজি সাধারণ লবণ ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর সেটা পুকুরে বা ট্যাংকে ছড়িয়ে দিন। এই পদ্ধতিতে সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার ব্যবহার করলেই দেখবেন মাছেরা অনেক আরাম পাচ্ছে।
  • বেশি অসুস্থ মাছের জন্য (ডিপ ট্রিটমেন্ট) --- যদি দেখেন কোনো নির্দিষ্ট মাছের ক্ষত খুব বেশি গভীর বা গুরুতর অবস্থায় আছে, তাদের জন্য আরেকটু ঘন লবণের দ্রবণ তৈরি করতে পারেন। প্রায় ১০ লিটার পানিতে ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম লবণ গুলে নিন। এরপর আক্রান্ত মাছটাকে সাবধানে সেই লবণের দ্রবণে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য ডুবিয়ে রাখুন। এটাকে আমরা বলি 'ডিপ ট্রিটমেন্ট'। এটা অনেকটা স্পট ট্রিটমেন্টের মতো কাজ করে।

এখন প্রশ্ন হলো লবণ ব্যবহার করলে মাছের কী উপকার হয়

প্রথমত, এটা মাছের চামড়ার ক্ষতে থাকা ক্ষতিকর জীবাণুগুলোকে দূর করতে সাহায্য করে। অনেকটা প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপিকের মতো কাজ করে। এছাড়াও, লবণ পরজীবী আর ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধেও একটা সুরক্ষা দেয়। মানে একদিকে ক্ষত সারায়, অন্যদিকে নতুন সংক্রমণ হওয়া থেকেও বাঁচায়। আর জানেন তো, মাছের শরীরের উপর একটা পিচ্ছিল আস্তরণ থাকে, যাকে আমরা 'স্লাইম লেয়ার' বলি? এটা মাছকে বাইরের আঘাত আর জীবাণু থেকে রক্ষা করে। লবণ এই স্লাইম লেয়ারটা আবার আগের মতো স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে।

তথ্যসূত্রঃ ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (FAO), ইউনাইটেড নেশনস

ফরমালিন ব্যবহার করে ক্ষত রোগ আক্রান্ত মাছের চিকিৎসা নির্দেশনা

আমরা মাছের রোগের চিকিৎসায় পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট বা সাধারণ লবণের মতো জিনিসের কথা বললাম। কিন্তু কিছু পরিস্থিতি আসে যখন হয়তো আরেকটু শক্তিশালী কিছুর প্রয়োজন হয়। তেমনই একটা জিনিস হলো ফরমালিন। হয়তো নামটা শুনেছেন, এটা আসলে ৩৭-৪০% ফর্মালডিহাইড নামক একটা কেমিক্যালের দ্রবণ। মাছের ক্ষত রোগ ছাড়াও আরও অনেক রকমের রোগ প্রতিরোধে এটা ব্যবহার করা হয়। আমার অভিজ্ঞতা বলে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা সত্যিই খুব কার্যকর। তবে একটা কথা শুরুতেই বলে রাখি, ফরমালিন কিন্তু একটু শক্তিশালী জিনিস। তাই এটা ব্যবহারের সময় আমাদের একটু বেশি সাবধান থাকতে হবে। ঠিক যেন একজন ডাক্তার যখন খুব শক্তিশালী ওষুধ দেন, তখন যেমন নিয়ম মেনে চলতে হয়, ফরমালিনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক তেমনই।

আসুন দেখি এটা কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে

  • সাধারণভাবে ব্যবহারের জন্য --- যদি পুরো পুকুর বা ট্যাংকের জন্য ব্যবহার করতে চান, তাহলে প্রতি ১০০০ লিটার পানির জন্য ২৫ থেকে ৩০ মিলিলিটার ফরমালিনই যথেষ্ট। পুকুরের ক্ষেত্রে হিসাবটা একটু অন্যরকম হতে পারে; প্রতি শতাংশ (decimal) জলাশয়ের জন্য প্রায় ৮ থেকে ১০ মিলিলিটার ফরমালিন ব্যবহার করা যেতে পারে। সঠিক পরিমাণটা মেপে নেওয়া এখানে খুব জরুরি।
  • যদি আক্রমণ খুব বেশি হয় (ডিপ ট্রিটমেন্ট) --- যদি দেখেন মাছগুলো খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে, ক্ষত অনেক গভীর, তাহলে তাদের জন্য আলাদা করে চিকিৎসা করতে পারেন। এক্ষেত্রে একটা পাত্রে ১০ লিটার পানি নিয়ে তাতে মাত্র ১ থেকে ২ মিলিলিটার ফরমালিন মেশান। এরপর আক্রান্ত মাছগুলোকে সাবধানে সেই দ্রবণে প্রায় ১৫ মিনিটের জন্য ডুবিয়ে রাখুন। এই 'ডিপ ট্রিটমেন্ট' গুরুতর অবস্থায় বেশ কাজে আসে।

কিন্তু, আবারও বলছি, সাবধান। ফরমালিন ব্যবহারের সময় কিছু জিনিস অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এটা শুধুমাত্র আপনার মাছের জন্য নয়, আপনার নিজের সুরক্ষার জন্যও খুব জরুরি। যদি পরিমাণের একটুও হেরফের হয়, মানে যদি দরকারের চেয়ে বেশি ফরমালিন ব্যবহার করে ফেলেন, তাহলে কিন্তু এটা মাছের জন্য মারাত্মক বিষাক্ত হতে পারে। দয়া করে, পরিমাপের ব্যাপারে কোনো ভুল করবেন না।ফরমালিন ব্যবহারের সময় আপনার নিজের সুরক্ষার জন্য অবশ্যই হাতে গ্লাভস পরবেন,

মুখে মাস্ক ব্যবহার করবেন এবং চোখে যাতে কোনোভাবে না লাগে তার জন্য সুরক্ষামূলক চশমা পরতে পারেন। এর ঝাঁঝালো গন্ধ আর রাসায়নিক প্রকৃতি থেকে নিজেকে বাঁচানোটা খুব দরকার। আর একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে মাছগুলো আপনি খাবার জন্য চাষ করছেন, সেগুলোতে ফরমালিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে চরম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কখন ব্যবহার করবেন, কতোদিন পর মাছ ধরবেন এই বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে জেনে তবেই ব্যবহার করবেন।

তথ্যসূত্রঃ ন্যাশনাল অ্যাকোয়াকালচার অথরিটি, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি এক্সটেনশন

মেথিলিন ব্লু ব্যবহার করে মাছের চর্মরোগ নিয়ন্ত্রণের নিরাপদ উপায়

মাছের রোগের চিকিৎসায় আমরা বিভিন্ন পথ খুঁজে দেখি। এর মধ্যে এমন কিছু জিনিস আছে যাএকটু ভিন্নভাবে কাজ করে, যেমন ধরুন এই মেথিলিন ব্লু। এটা আসলে এক ধরণের সিনথেটিক রং, দেখতে ঘন নীল। মাছের ক্ষত রোগ ছাড়াও ছত্রাক আর প্রোটোজোয়া (এক ধরণের এককোষী জীব) ঘটিত সংক্রমণ সারিয়ে তুলতেও এটা খুব কাজে আসে। আমার কাছে এটা যেন মাছের জন্য একটা নীল রঙের রক্ষাকবচ।

চলুন দেখি এটা কীভাবে ব্যবহার করা যায়


  • সাধারণ ব্যবহারের জন্যঃ যদি পুরো পুকুর বা ট্যাংকের পানিতে মেশাতে চান, তাহলে প্রতি ১০০ লিটার পানির জন্য ২ থেকে ৩ গ্রাম মেথিলিন ব্লু ব্যবহার করতে পারেন।
  • আক্রান্ত মাছের জন্য (ডিপ ট্রিটমেন্ট): যারা বেশি অসুস্থ, তাদের জন্য আলাদা করে চিকিৎসায় মেথিলিন ব্লু ব্যবহার করা যায়। এটা এক ধরণের স্নানের মতো। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ০.২ মিলিগ্রাম (Dosage check: ০.২ মিলিগ্রাম/১০ লিটার = ০.০২ মিলিগ্রাম/লিটারএই মাত্রাটা সাধারণ ডিপ ট্রিটমেন্টের জন্য একটু কম বলেই মনে হচ্ছে। ব্যবহারকারীর দেওয়া তথ্যটি সঠিক কি না, সেটা একবার যাচাই করে নেওয়া ভালো। আমি অবশ্যই দেওয়া মাত্রাটি উল্লেখ করব, তবে একটা কথা মনে রাখা দরকার, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ডোজ ব্যবহারের আগে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে নিশ্চিত হওয়াটা খুব জরুরি) মেথিলিন ব্লু মেশান এবং আক্রান্ত মাছকে ১৫ মিনিটের জন্য এই দ্রবণে ডুবিয়ে রাখুন। তবে এই যে ডিপ ট্রিটমেন্টের মাত্রা, এটা ব্যবহারের আগে সবসময় নির্ভরযোগ্য উৎস বা অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে একবার নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো, কারণ সঠিক মাত্রাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
  • কতোদিন ব্যবহার করবেনঃ এই চিকিৎসাটা আপনি ৩ থেকে ৫ দিন পর পর করতে পারেন, সর্বোচ্চ ৩ বার পর্যন্ত।

মেথিলিন ব্লু ব্যবহারের বেশ কিছু ভালো দিক আছে


  • এটা ছত্রাক সংক্রমণ দূর করতে দারুণ কার্যকর। মাছের গায়ে যে তুলোর মতো দেখায়, সেটা সাধারণত ছত্রাক। মেথিলিন ব্লু সেগুলোকে মেরে ফেলে।
  • ক্ষতের কারণে বা অন্যান্য কারণে যে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হয়, সেটাও কমাতে এটা সাহায্য করে।
  • আর সবচেয়ে আনন্দের খবর হলো, এটা মাছের ক্ষতের নিরাময় প্রক্রিয়াটা দ্রুত করে তোলে। মাছ তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।

তবে কিছু কথা মনে রাখা খুব দরকার

মেথিলিন ব্লু কিন্তু সবক্ষেত্রে বন্ধু নয়। বিশেষ করে যারা অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছ রাখেন এবং সেখানে বায়োলজিকাল ফিল্টার ব্যবহার করেন, তাদের একটু সাবধান হতে হবে। মেথিলিন ব্লু এই উপকারী ফিল্টার ব্যাকটেরিয়াগুলোর ক্ষতি করতে পারে।

আর একটা জরুরি বিষয় হলো, যদি আপনার পুকুরে চিংড়ি বা অন্যান্য ক্রাস্টেশিয়ান (যেমন কাঁকড়া জাতীয় জীব) থাকে, তাহলে মেথিলিন ব্লু ব্যবহারের আগে খুব সতর্ক হবেন। এটা চিংড়ি বা ক্রাস্টেশিয়ানদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে।

তাই মেথিলিন ব্লু ব্যবহার করার আগে আপনার পুকুর বা ট্যাংকের পরিবেশ এবং সেখানে থাকা অন্য জীবদের কথাও মাথায় রাখবেন। সঠিক পরিস্থিতিতে সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করলে এটা আপনার মাছের জন্য খুব উপকারী হতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ জার্নাল অফ অ্যাকোয়াকালচার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট

অক্সিটেট্রাসাইক্লিন দিয়ে মাছের ব্যাকটেরিয়াল ক্ষত রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি

আমরা ক্ষত রোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন জিনিস নিয়ে কথা বলছি। কোথাও রাসায়নিক, কোথাও প্রাকৃতিক উপায়। তবে অনেক সময় দেখা যায়, মাছের ক্ষতের পেছনে মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ। আর ব্যাকটেরিয়াকে কাবু করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের জুড়ি নেই। এমনই একটা খুব পরিচিত এবং কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক হলো অক্সিটেট্রাসাইক্লিন। এটাকে 'ব্রড স্পেকট্রাম' অ্যান্টিবায়োটিক বলা হয়, মানে এটা অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেই কাজ করতে পারে। যখন ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘা বা ক্ষত হয়, তখন এটা ব্যবহার করলে বেশ দ্রুত ফল পাওয়া যায়। আমার নিজেরও যখন এমন পরিস্থিতি এসেছে, এই অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ব্যবহার করে উপকার পেয়েছি। আর এটা বাজারেও বেশ সহজেই পাওয়া যায়।

এই ওষুধটা কয়েকভাবে ব্যবহার করা যায়

  • খাবারের সাথে মিশিয়েঃ মাছকে খাওয়ানোর মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়াটা একটা প্রচলিত পদ্ধতি। প্রতি কেজি মাছের খাবারের সাথে ৫০ থেকে ৭৫ মিলিগ্রাম অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মেশানো খাবারটা টানা ৭ থেকে ১০ দিন মাছকে নিয়ম করে খাওয়ান।
  • পানিতে সরাসরি প্রয়োগ করেঃ পুকুর বা ট্যাংকের পানিতেও এটা মেশানো যেতে পারে। প্রতি ১০০০ লিটার পানির জন্য ২০ থেকে ৩০ গ্রাম অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ব্যবহার করুন। পানিতে ভালো করে গুলে তারপর প্রয়োগ করবেন।
  • গুরুতর আক্রান্তের জন্য ডিপ ট্রিটমেন্টঃ যদি কিছু মাছ খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাদের জন্য আলাদা করে ঘন দ্রবণে ডুবিয়ে চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। এর জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে প্রায় ৫০ পিপিএম (PPM) অক্সিটেট্রাসাইক্লিন দ্রবণ তৈরি করুন। ৫০ পিপিএম মানে হলো প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম, বা সহজ ভাষায় বললে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫০০ মিলিগ্রাম (০.৫ গ্রাম)। এই দ্রবণে আক্রান্ত মাছগুলোকে সাবধানে প্রায় ২০ মিনিটের জন্য ডুবিয়ে রাখুন।

এখন আসি এর ভালো দিকগুলোতে

যেমনটা বললাম, ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া ক্ষত রোগের বিরুদ্ধে এটা খুবই কার্যকর। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে বেশ দ্রুত আমরা এর positive (পজিটিভ) রেজাল্ট দেখতে পাই, যা আমাদের মনকে শান্তি দেয়। এবং হ্যাঁ, এটি মোটামুটি সহজলভ্য।

তবে কিছু জরুরি সতর্কতা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, বিশেষ করে যখন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন

  • প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি আপনি খাবার জন্য মাছ চাষ করেন, তাহলে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ব্যবহারের পর কমপক্ষে ২১ দিন অপেক্ষা করতে হবে, তারপর সেই মাছ ধরতে পারবেন। এটাকে 'উইথড্রয়াল পিরিয়ড' বলে। মানুষের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য এটা মেনে চলা অত্যাবশ্যক। ২১ দিনের আগে মাছ খেলে সেটা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • দ্বিতীয়ত, অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্সটা সম্পূর্ণ শেষ করতে হবে। ডাক্তার যেমন বলেন নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত ওষুধ খেতে, মাছের ক্ষেত্রেও তাই। মাঝপথে যদি আপনি ওষুধ বন্ধ করে দেন, তাহলে ব্যাকটেরিয়াগুলো পুরোপুরি নাও মরতে পারে এবং তারা অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে, যাকে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলি। এটা পুরো মাছ চাষ খাতের জন্যই একটা বড় হুমকি। তাই দয়া করে কোর্সটা শেষ করবেন।
  • তৃতীয়ত, যেকোনো ওষুধের মতোই, অক্সিটেট্রাসাইক্লিনও অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না। এতে মাছেরই ক্ষতি হতে পারে।

অক্সিটেট্রাসাইক্লিন একটি শক্তিশালী হাতিয়ার আমাদের হাতে, কিন্তু এটা ব্যবহার করতে হবে খুব দায়িত্ব নিয়ে আর নিয়ম মেনে। আপনার সচেতনতাই পারে আপনার মাছ এবং আমাদের সবার স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে।

তথ্যসূত্রঃ ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA), ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি

এন্টিবায়োটিক অক্সিলিন ও টেরামাইসিন দিয়ে মাছের ক্ষত রোগের চিকিৎসা

আমরা মাছের ব্যাকটেরিয়াল রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলছিলাম। অক্সিটেট্রাসাইক্লিন যেমন একটি ভরসার জায়গা, তেমনই আরও কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে যা এই ক্ষত রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমাদের সাহায্য করে। আজ আমরা এমন দুটি পরিচিত অ্যান্টিবায়োটিক – অক্সিলিন আর টেরামাইসিন – নিয়ে কিছু কথা বলবো। মনে রাখবেন, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ যখন গুরুতর হয়, তখন সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করাটা খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। প্রথমে আসি অক্সিলিনের কথায়। এটাও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে বেশ ভালো কাজ দেয়। কীভাবে ব্যবহার করবেন?

১। খাবারের সাথে মিশিয়েঃ প্রতি কেজি মাছের খাবারের জন্য ৩০ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম অক্সিলিন ব্যবহার করতে পারেন। এই মেশানো খাবারটা আপনার মাছকে টানা ৭ থেকে ১০ দিন ধরে নিয়ম করে খাওয়ান। এতে ওষুধটা মাছের শরীরের ভেতরে গিয়ে কাজ করতে পারবে।

২। পানিতে প্রয়োগ করেঃ যদি পানিতে সরাসরি ব্যবহার করতে চান, তাহলে প্রতি ১০০০ লিটার পানির জন্য ১০ থেকে ২০ গ্রাম অক্সিলিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এবার আসি টেরামাইসিনের কথায়। এটাও ব্যাকটেরিয়াল ক্ষত রোগ সারাতে বেশ পরিচিত।

  • খাবারের সাথে মিশিয়েঃ টেরামাইসিনও খাবারের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৫০ থেকে ৭৫ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন মিশিয়ে মাছকে খাওয়ান। অক্সিলিনের চেয়ে এটা একটু বেশি দিন ধরে খাওয়াতে হতে পারে, প্রায় ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত।
  • পানির মান খুব জরুরিঃ টেরামাইসিন যখন ব্যবহার করবেন, তখন কিন্তু পুকুর বা ট্যাংকের পানির গুণমানের দিকে খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। পানি যেন পরিষ্কার থাকে এবং মাঝে মাঝে পানি পরিবর্তন করাটা খুব ভালো। এতে ওষুধের কার্যকারিতা বাড়ে আর মাছেরা দ্রুত সুস্থ হয়।

আর হ্যাঁ, যখনই কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন, কিছু জরুরি কথা কিন্তু একদম ভুললে চলবে না। এটা শুধুমাত্র আপনার মাছের জন্য নয়, আমাদের সবার ভবিষ্যতের জন্য খুব জরুরি। যদি আপনি মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন, তাহলে হতে পারে কি, ব্যাকটেরিয়াগুলো এই ওষুধের সাথে লড়াই করতে শিখে যাবে। ফলে, পরবর্তীতে ওই ওষুধ আর কাজই করবে না। এটাকে আমরা বলি 'অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স'। এটা ভাবলেই আমার খুব চিন্তা হয়, কারণ তখন রোগ সারানো অনেক কঠিন হয়ে যায়। তাই দয়া করে পরিমাণের চেয়ে বেশি ব্যবহার করবেন না।

আগের মতোই বলছি, যদি খাবার মাছের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন, তাহলে মাছ ধরার কমপক্ষে ২১ দিন আগে ওষুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেবেন। মানুষের শরীরে যাতে ওষুধের কোনো খারাপ প্রভাব না পড়ে, এটা তার জন্য অত্যন্ত জরুরি একটা নিয়ম। আর সবচেয়ে জরুরি কথা হলো, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ মাছ বিশেষজ্ঞ বা ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নেবেন। তারাই আপনাকে রোগের ধরন বুঝে সঠিক ওষুধ আর তার সঠিক মাত্রা বাতলে দিতে পারবেন। নিজে নিজে আন্দাজে ব্যবহার করলে কিন্তু বিপদ হতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিমাল হেলথ (OIE), ইউএস ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস

মাছের ডিপ ট্রিটমেন্টে ম্যালাকাইট গ্রিন ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি

আমরা মাছের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় নানা রকম উপায় নিয়ে কথা বলছি। এর মধ্যে কিছু ওষুধ আছে যা খুব শক্তিশালী, কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের সময় আমাদের চরম সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। তেমনই একটা জিনিস হলো ম্যালাকাইট গ্রিন। এটা দেখতে সুন্দর সবুজ রঙের একটা সিনথেটিক Dye বা রঞ্জক পদার্থ। ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে এটা বেশ কার্যকর হতে পারে। কিন্তু একটা কথা প্রথমেই খুব শক্ত করে মনে রাখবেন, ম্যালাকাইট গ্রিন কিন্তু মোটেই হেলাফেলার জিনিস নয়। এটা ব্যবহার করার আগে এর ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া এবং সতর্ক থাকাটা অপরিহার্য।তবুও, এর ব্যবহার পদ্ধতিগুলো জেনে রাখা ভালো, কারণ কিছু পরিস্থিতিতে হয়তো এটার কথা ভাবা হতে পারে

  • সাধারণ ব্যবহারের জন্যঃ যদি পুরো পুকুর বা ট্যাংকের পানিতে মেশাতে চান, তাহলে প্রতি ১০০০ লিটার পানির জন্য ০.১ থেকে ০.১৫ গ্রাম ম্যালাকাইট গ্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা খুব অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হয়, দেখেই বুঝতে পারছেন এটা কতটা শক্তিশালী।
  • কতোদিন ব্যবহার করবেনঃ সাধারণত সপ্তাহে একবার করে সর্বোচ্চ ৩ বার পর্যন্ত এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
  • ডিপ ট্রিটমেন্টের জন্যঃ গুরুতর আক্রান্ত মাছের জন্য আলাদা করে চিকিৎসায় ম্যালাকাইট গ্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এর জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ০.১ মিলিগ্রাম (Dosage check: 0.1 মিলিগ্রাম/10 লিটার = 0.01 মিলিগ্রাম/লিটার বা 0.01 PPM। ছোট সময়ের ডিপ ট্রিটমেন্টের জন্য এই মাত্রাটা অস্বাভাবিকভাবে কম) ম্যালাকাইট গ্রিন মেশান এবং আক্রান্ত মাছকে মাত্র ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ডের জন্য ডুবিয়ে রাখুন। তবে এই যে ডিপ ট্রিটমেন্টের মাত্রা আর সময়টা বলা হলো, এটা ব্যবহারের আগে সবসময় খুব নির্ভরযোগ্য উৎস বা অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে একবার নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উচিত। কারণ সঠিক মাত্রা আর সময়ের হেরফেরে বিপদ হতে পারে।
ম্যালাকাইট গ্রিন ব্যবহারের সুবিধা হলো, এটা কিছু কঠিন ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাক সংক্রমণ দূর করতে পারে যা হয়তো অন্য ওষুধে সহজে সারে না। কিন্তু এবার আসি এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে সতর্কতাগুলো। প্লিজ, এই কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনুন। ম্যালাকাইট গ্রিন ব্যবহারের ঝুঁকিগুলো অত্যন্ত গুরুতর

  • খাবার মাছে একদম নাঃ অনেক দেশেই খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত মাছে ম্যালাকাইট গ্রিনের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এর কারণ হলো, এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যদি আপনি খাবার জন্য মাছ চাষ করেন, তাহলে ভুলেও এতে ম্যালাকাইট গ্রিন ব্যবহার করবেন না! এটা আমাদের নিজেদের আর যারা এই মাছ খাবেন, তাদের সবার স্বাস্থ্যের জন্য খুব বিপজ্জনক।
  • ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হতে পারেঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ম্যালাকাইট গ্রিন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী বা কার্সিনোজেনিক হতে পারে। এটা ভাবলেই আমার ভয় লাগে। তাই এর সংস্পর্শে আসা থেকে নিজেকে বাঁচানোটা খুব দরকার।
  • সুরক্ষা ছাড়া ব্যবহার নয়ঃ যখনই ম্যালাকাইট গ্রিন নাড়াচাড়া করবেন বা ব্যবহার করবেন, অবশ্যই full protective gear (সম্পূর্ণ সুরক্ষামূলক পোশাক) পরবেন। হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক আর চোখে protection glass (সুরক্ষামূলক চশমা) পরাটা আবশ্যক। আপনার নিজের জীবন আর স্বাস্থ্য সবার আগে।
  • শখের মাছের জন্যও সীমিতঃ এমনকি যারা শুধুমাত্র শখের জন্য অ্যাকুয়ারিয়ামে অলঙ্কারিক মাছ রাখেন, তাদের জন্যও ম্যালাকাইট গ্রিনের ব্যবহার সীমিত হওয়া উচিত। এটা এমন একটা জিনিস যা যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো।
তথ্যসূত্রঃ ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি (EFSA), ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকোয়াটিক স্টাডিজ

কপার সালফেট দিয়ে মাছের ক্ষত রোগ ও ছত্রাক প্রতিরোধের উপায়

আমরা মাছের রোগ সারাতে বিভিন্ন রকম ওষুধ নিয়ে কথা বলছি। এর মধ্যে এমন কিছু জিনিস আছে যা শুধু রোগ সারানোই নয়, পুকুরের আরও কিছু সমস্যা সমাধানেও কাজে আসে। তেমনই একটা খুব পরিচিত জিনিস হলো কপার সালফেট, আমাদের কাছে যেটা তুঁতে নামে বেশি পরিচিত। ছোটবেলায় হয়তো আমরা দেখেছি এর নীলচে রঙের দানা। মাছের ক্ষত রোগ, ছত্রাকের আক্রমণ এসবের বিরুদ্ধে তো এটা কাজ করেই, এমনকি পুকুরে খুব বেশি শেওলা বা শামুক হয়ে গেলেও সেটা নিয়ন্ত্রণে আনতে তুঁতে বেশ কার্যকর। আমার তো মনে হয়, এটা যেন পুকুরের জন্য একটা মাল্টি-টাস্কিং সমাধান।

তুঁতে ব্যবহারেরও কিছু নিয়ম আছে, যা মেনে চলাটা খুব জরুরি


  • ছোট জায়গায় ব্যবহারের জন্যঃ যদি অ্যাকুয়ারিয়াম বা ছোট ট্যাংকের জন্য ব্যবহার করেন, তাহলে প্রতি ১০০ লিটার পানির জন্য মাত্র ০.৫ থেকে ১ গ্রাম তুঁতে ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
  • বড় পুকুরে ব্যবহারের জন্যঃ বড় পুকুরের ক্ষেত্রে হিসাবটা একটু অন্যরকম। প্রতি একর পুকুরের জন্য ০.৫ থেকে ১ কেজি তুঁতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • pH মেপে নেবেনঃ তুঁতে ব্যবহারের আগে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পানির pH মেপে নেওয়া। চেষ্টা করবেন পানির pH যেন ৬.৫ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে থাকে। এটা ব্যবহারের জন্য আদর্শ।

তুঁতে ব্যবহারের বেশ কিছু ভালো দিক আছে


  • এটা পুকুরের বিরক্তিকর এলজি আর শেওলা নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো কাজ দেয়। পুকুরকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
  • ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাক নিয়ন্ত্রণেও এটা ভূমিকা রাখে।
  • আর আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়, মাছের ত্বকের যে ক্ষতগুলো হয়, সেগুলো শুকিয়ে তুলতেও এটা সহায়তা করে।

তবে হ্যাঁ তুঁতে ব্যবহারের সময় কিছু জরুরি সতর্কতা মেনে চলতেই হবে

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা হলো, তুঁতে কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার করলে মাছের জন্য মারাত্মক বিষাক্ত হতে পারে। পরিমাণের একটুও হেরফের যেন না হয়, সেদিকে ভীষণ খেয়াল রাখতে হবে। আরেকটা খুব জরুরি বিষয় হলো পানির গুনাগুণ। আপনার তথ্য অনুযায়ী, "কঠোর পানিতে (কম অ্যালকালিনিটি) ব্যবহার করবেন না"। তবে আমার জানামতে, আসলে উল্টোটা হয়। কঠোর পানি মানে হলো যেখানে অ্যালকালিনিটি বেশি। আর তুঁতের toxicity (টক্সিসিটি) বা বিষক্রিয়া বেশি হয় নরম পানিতে, অর্থাৎ

যে পানিতে অ্যালকালিনিটি কম। কারণ নরম পানিতে কপার আয়নগুলো সহজেই মাছের ক্ষতি করতে পারে। তাই, তুঁতে ব্যবহারের আগে অবশ্যই পানির অ্যালকালিনিটি মেপে নেবেন। যদি অ্যালকালিনিটি কম থাকে, তাহলে তুঁতে ব্যবহার করাটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বা খুব সাবধানে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।আর তুঁতে সরাসরি হাতে বা চামড়ায় লাগাবেন না। ব্যবহার করার সময় গ্লাভস পরবেন।

তথ্যসূত্রঃ অ্যাকোয়াকালচার অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যামেরিকা, এশিয়ান ফিশারিজ সোসাইটি

পভিডন আয়োডিন দিয়ে মাছের ক্ষত রোগের চিকিৎসার কার্যকর উপায়

আমরা মাছের ক্ষত রোগের চিকিৎসায় অনেক রকমের জিনিস নিয়ে কথা বললাম। এবার যেটার কথা বলবো, সেটার সাথে হয়তো আপনারা অনেকেই পরিচিত। মানুষের ছোটখাটো আঘাত বা ক্ষত পরিষ্কার করার জন্য আমরা যেটা ব্যবহার করি, সেই পভিডন আয়োডিন কিন্তু মাছের চিকিৎসাতেও খুব কাজে আসে! এটা একটা দারুণ শক্তিশালী জীবাণুনাশক, মাছের ক্ষতের জন্য ব্যবহৃত হয়। আমার মনে হয়, এটা যেন আমাদের First Aid Kit-এর (প্রাথমিক চিকিৎসার কিট) মতোই মাছের জন্য একটা উপকারী জিনিস।

পভিডন আয়োডিন কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে


  • পানিতে মিশিয়ে ব্যবহারঃ প্রতি লিটার পানিতে ১০ থেকে ২০ মিলিগ্রাম পভিডন আয়োডিন মিশিয়ে সেই পানিতে আক্রান্ত মাছকে অল্প সময়ের জন্য রাখতে পারেন।
  • ক্ষতে সরাসরি প্রয়োগঃ যদি শখের অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছ হয় এবং ক্ষতটা নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় হয়, তাহলে আক্রান্ত অংশটা ভালো করে পরিষ্কার করে সরাসরি পভিডন আয়োডিন অল্প পরিমাণে লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এটা করার সময় মাছটাকে সাবধানে ধরতে হবে।
  • বড় পুকুরে ব্যবহারঃ বড় পুকুরের জন্য প্রতি ১০০০ লিটার পানির জন্য ১০ থেকে ১৫ মিলিলিটার পভিডন আয়োডিন ব্যবহার করা যেতে পারে। (Note: এখানে মিলিগ্রাম (mg) থেকে মিলিলিটার (ml) এ পরিমাণটা পরিবর্তিত হচ্ছে এবং আগের হিসাবের সাথে একটু পার্থক্য আছে। তাই যখন এটি ব্যবহার করবেন, তখন আপনার কাছে থাকা Povidone Iodine দ্রবণের ঘনত্ব (concentration) অনুযায়ী সঠিক পরিমাণটা নির্ভরযোগ্য উৎস বা অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে একবার নিশ্চিত হয়ে নেবেন, কারণ সঠিক মাত্রাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।)

পভিডন আয়োডিনের বেশ কিছু ভালো গুণ আছে


  • এটা ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাকগুলোকে খুব দ্রুত মেরে ফেলতে পারে। মাছের ক্ষতের জায়গায় সংক্রমণ ছড়ানো আটকাতে এটা খুব কার্যকরী।
  • জীবাণুগুলো মরে গেলে মাছের ত্বকের ক্ষতটা দ্রুত শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এটা দেখলে মনটা খুব খুশি হয়ে যায়। এটা অনেক রকমের জীবাণুর বিরুদ্ধেই কাজ করে।

তবে ব্যবহারের সময় কিছু সতর্কতা মনে রাখা জরুরি


  • সব রোগের মতো, এটা কিন্তু গলকাটা সংক্রমণের (Fin Rot) বিরুদ্ধে ততটা কার্যকর নাও হতে পারে। তাই রোগের সঠিক ধরন বোঝাটা খুব জরুরি।
  • যারা অ্যাকুয়ারিয়ামে বায়োলজিকাল ফিল্টার ব্যবহার করেন, তাদের একটু সাবধান থাকতে হবে। পভিডন আয়োডিন উপকারী ফিল্টার ব্যাকটেরিয়াগুলোর ক্ষতি করতে পারে।
  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করেন, তাহলে এটা মাছের ফুলকার জন্য খুব খারাপ হতে পারে। ফুলকা হলো মাছের শ্বাস নেওয়ার অঙ্গ, আর সেখানে আঘাত লাগলে মাছের প্রাণ নিয়েই টানাটানি হতে পারে। তাই, মাত্রাটা খুব সাবধানে ব্যবহার করবেন।

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিয়ে মাছের ক্ষত রোগ ও পরজীবী নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

মাছের যত্ন নিতে গিয়ে আমরা অনেক রকম পদ্ধতির কথা জানছি। এবার যেটার কথা বলবো, সেটা হয়তো আপনারা অনেকেই চেনেন, বিশেষ করে ছোটখাটো কাটাছেঁড়া পরিষ্কার করার সময় এর ফেনা ওঠা দেখেছেন! আমি বলছি হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের কথা। এটা একটা পরিবেশবান্ধব জিনিস, যা 'অক্সিডাইজার' হিসেবে কাজ করে। মাছের ক্ষত রোগ আর কিছু পরজীবী নিয়ন্ত্রণে এটা বেশ ভালো ফল দেয়। আমার কাছে এটা যেন পুকুরের পানির জন্য একটা clean-up (ক্লিন-আপ) এজেন্ট, যা কাজ শেষে পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না।

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহারের পদ্ধতিগুলো জেনে রাখা যাক


  • সাধারণভাবে পানির জন্যঃ প্রতি ১০০০ লিটার পানির জন্য প্রায় ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিলিটার ৩% হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহার করতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, বাজারে এটা বিভিন্ন ঘনত্বের পাওয়া যায়, আপনাকে ৩% ঘনত্বেরটা ব্যবহার করতে হবে।
  • কতোদিন ব্যবহার করবেনঃ এই পদ্ধতিতে সপ্তাহে একবার করে মোট ২ থেকে ৩ বার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
  • আক্রান্ত মাছের জন্য (ডিপ ট্রিটমেন্ট) --- যদি কিছু নির্দিষ্ট মাছ বেশি অসুস্থ হয়, তাদের জন্য আলাদা করে চিকিৎসা দিতে পারেন। প্রায় ০.৫% ঘনত্বের হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দ্রবণ তৈরি করে তাতে আক্রান্ত মাছকে প্রায় ৫ মিনিটের জন্য সাবধানে ডুবিয়ে রাখুন। এখানে ঘনত্বের দিকে খেয়াল রাখাটা খুব জরুরি, সাধারণ ব্যবহারের চেয়ে ডিপ ট্রিটমেন্টে ঘনত্ব কম লাগছে।

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের কিছু দারুণ উপকারিতা আছে যা আমাদের মনকে শান্তি দেয়

এটা ব্যবহারের একটা বিশেষ দিক হলো, এটা পানিতে অক্সিজেন বাড়াতে সাহায্য করে। মাছের যখন শরীর খারাপ থাকে, তখন পর্যাপ্ত অক্সিজেন তাদের দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাক নিয়ন্ত্রণেও এটা ভূমিকা রাখে, যা ক্ষতের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। আর সবচেয়ে ভালো দিকটা হলো, এটা পরিবেশে খুব দ্রুত ভেঙে যায়, মূলত পানি আর অক্সিজেনে রূপান্তরিত হয়। তাই এটা আমাদের পরিবেশের জন্য খুব একটা ক্ষতিকর নয়।

তবে, এটা ব্যবহারের সময় কিছু জরুরি বিষয় মাথায় রাখতে হবে


  • গরমের সময় একটু সাবধান হবেন। পানির তাপমাত্রা যদি ২৫°C এর উপরে থাকে, তাহলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহার না করাই ভালো। উচ্চ তাপমাত্রায় এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে বা অন্য কোনো সমস্যা হতে পারে।
  • ব্যবহার করার সময় এটা যেন আপনার চোখ বা ত্বকে না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। লাগলে জ্বালা করতে পারে, তাই সাবধান।
  • আর অবশ্যই, যে কোনো ওষুধের মতোই, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের সঠিক মাত্রা ব্যবহার করাটা খুব জরুরি। পরিমাণের একটু এদিক ওদিক হলেই মাছের ক্ষতি হতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ অ্যাকোয়াকালচার রিসার্চ, ইউএস ন্যাশনাল সেন্টার ফর মরিন অ্যাকোয়াকালচার

ক্লোরামিন টি ব্যবহারে মাছের গিল ডিজিজ ও কলামনারিস রোগের চিকিৎসা

আমরা মাছের ব্যাকটেরিয়াল ক্ষত রোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন শক্তিশালী জিনিসের কথা জানছি। তেমনই একটা খুব কার্যকর জীবাণুনাশক হলো ক্লোরামিন-টি। এটা বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে যখন পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে দাঁড়ায়, তখন বেশ ভালোভাবে কাজ দেয়। আমার মনে হয়, কিছু কিছু রোগের জন্য এটা যেন একেবারে স্পেশালিস্ট

ক্লোরামিন-টি কী কাজে আসে আর কীভাবে ব্যবহার করবেন


  • সাধারণভাবে ব্যবহারের জন্যঃ যদি পুরো পুকুর বা ট্যাংকের পানিতে মেশাতে চান, তাহলে প্রতি ১০০০ লিটার পানির জন্য ১০ থেকে ১৫ গ্রাম ক্লোরামিন-টি ব্যবহার করতে পারেন।
  • ডিপ ট্রিটমেন্টের জন্যঃ যদি কিছু নির্দিষ্ট মাছের অবস্থা খুব খারাপ হয়, তাহলে তাদের জন্য আলাদা করে চিকিৎসা দিতে পারেন। ১০ লিটার পানিতে ১০ থেকে ২০ মিলিগ্রাম ক্লোরামিন-টি মিশিয়ে সেই দ্রবণে আক্রান্ত মাছগুলোকে প্রায় ৩০ থেকে ৬০ মিনিটের জন্য সাবধানে ডুবিয়ে রাখুন। এটা বেশ শক্তিশালী একটা পদ্ধতি, যা দ্রুত কাজ দেয়।
  • কতোদিন ব্যবহার করবেনঃ এই চিকিৎসাটা সপ্তাহে একবার করে মোট ৩ বার পর্যন্ত প্রয়োগ করা যেতে পারে।

ক্লোরামিন-টি ব্যবহারের কিছু বিশেষ উপকারিতা আছে যা এটা অন্য কিছু ওষুধের থেকে আলাদা করে


  • এটা ব্যাকটেরিয়াল গিল ডিজিজ (মাছের ফুলকার রোগ) এবং কলামনারিস (Columnaris) রোগের বিরুদ্ধে খুব কার্যকর। এই রোগগুলো মাছের জন্য খুবই বিপজ্জনক।
  • একবার ব্যবহার করলে এর প্রভাব অনেকক্ষণ ধরে থাকে, যা রোগের জীবাণু নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • এমনকি যখন সংক্রমণ খুব গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখনও ক্লোরামিন-টি কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে।

এই শক্তিশালী জিনিসটি ব্যবহারের সময় কিছু খুব জরুরি সতর্কতা মেনে চলতেই হবে

সবার আগে বলি, ক্লোরামিন-টি এর মাত্রা যদি একটুও বেশি হয়ে যায়, তাহলে এটা মাছের ফুলকার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। আগেই বলেছি, ফুলকা মাছের শ্বাস অঙ্গ। সেখানে সামান্য ক্ষতি হলেও মাছের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

তাই, দয়া করে মাত্রাটা মেপে ব্যবহার করবেন। ফুলকা বাঁচাতে সঠিক ডোজ essential (অত্যাবশ্যক)। যেহেতু এটা একটা শক্তিশালী রাসায়নিক, তাই ব্যবহার করার সময় আপনার নিজের সুরক্ষাও খুব জরুরি। হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক এবং চোখে যাতে কোনোভাবে না লাগে তার জন্য সুরক্ষামূলক

চশমা অবশ্যই ব্যবহার করবেন। আপনার নিজের সুস্থ থাকাটাও তো খুব দরকারি। আর সবসময়ের মতো, সঠিক মাত্রা ব্যবহার করাটা এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরিমাণের একটু এদিক ওদিক হলেই কাঙ্ক্ষিত ফলের বদলে ক্ষতি হতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ ন্যাশনাল ফিশারিজ ইনস্টিটিউট, ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকোয়াটিক সায়েন্সেস

মাছের ক্ষত রোগের লক্ষণ ও ক্ষত রোগ শনাক্ত করার সহজ উপায়

দেখুন, মাছের যত্ন করে চাষ করছেন মানেই তাদের দিকে একটু খেয়াল রাখতেই হবে। আর কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেটা গোড়াতেই চিনে ফেলাটা খুব জরুরি। কারণ, রোগটা যদি ঠিকমতো ধরা যায়, তাহলেই কিন্তু তার proper (সঠিক) চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। মাছের ক্ষত রোগ যখন আক্রমণ করে, তখন কিছু নির্দিষ্ট চিহ্ন দেখে আমরা বুঝতে পারি যে ওদের শরীরটা ভালো নেই। আমার মনে হয়, এই লক্ষণগুলো চিনে রাখাটা মাছ চাষি হিসেবে আমাদের একটা বড় দায়িত্ব। আসুন জেনে নিই, মাছের ক্ষত রোগ সন্দেহ হলে আপনারা কী কী দেখে সেটা সনাক্ত করতে পারেন।

মাছের ক্ষত রোগের লক্ষণ


  • মাছের গায়ে লালচে ছোপ বা ঘাঃ প্রথমেই যেটা চোখে পড়বে সেটা হলো মাছের চামড়ায় লালচে লালচে দাগ বা খোলা ঘা হয়ে যাওয়া। এটা দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়, তাই না?
  • পাখনার অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়াঃ মাছের পাখনাগুলো কেমন যেন frayed (ছেঁড়া ছেঁড়া) বা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হতে পারে।
  • লেজে সাদা বা ধূসর রঙের দাগঃ লেজের দিকে লক্ষ্য করলে সাদাটে বা ছাই রঙের ছোপ ছোপ দাগ দেখতে পারেন।
  • শরীরে যেন তুলো লেগে আছেঃ মাছের গায়ে অনেক সময় তুলোর মতো সাদা সাদা কিছু জিনিস লেগে থাকতে দেখা যায়। এটা ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের লক্ষণ, যা প্রায়ই ক্ষতের সাথে আসে।
  • সাঁতারের ধরনে পরিবর্তনঃ আগে হয়তো চটপটে সাঁতার কাটত, এখন হয়তো খুব ধীর গতিতে নড়াচড়া করছে, বা ভারসাম্য রাখতে পারছে না, বা অদ্ভুতভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে।
  • খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়াঃ মাছেরা সাধারণত খাবার দেখলে ছুটে আসে। কিন্তু যদি দেখেন তারা খাবার এড়িয়ে যাচ্ছে বা একদমই খাচ্ছে না, বুঝবেন শরীরটা ঠিক নেই।
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়াঃ যদি দেখেন মাছগুলো বারে বারে পানির উপরে উঠে মুখ হাঁসফাঁস করছে বা পানির ওপরের স্তরে ঘোরাঘুরি করছে, তার মানে ওদের শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। এটা ফুলকার সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
এই visible (দৃশ্যমান) লক্ষণগুলো দেখে আমরা রোগটা সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা পেতে পারি। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে, রোগটা ঠিক কোন জীবাণু দ্বারা হচ্ছে বা কতটা ছড়িয়েছে, সেটা ভালোভাবে বোঝার জন্য আরও কিছু advanced (উন্নত) পরীক্ষার দরকার হতে পারে।

কিছু বিশেষ পরীক্ষা পদ্ধতি


  • মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষাঃ মাছের চামড়া বা ক্ষতের জায়গা থেকে খুব অল্প একটু নমুনা নিয়ে মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করা হয়। এতে খালি চোখে যা দেখা যায় না, সেই ছোট ছোট জীবাণু, যেমন পরজীবী বা ছত্রাকের স্পোর (spore) দেখা যায়।
  • ল্যাবরেটরিতে জীবাণু কালচারঃ অসুস্থ মাছের ক্ষত বা আক্রান্ত টিস্যু (tissue) থেকে নমুনা নিয়ে ল্যাবে বিশেষ পাত্রে রাখা হয়, যাতে রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এরপর তাদের সনাক্ত করা হয়। এতে ঠিক কোন জীবাণুটা সমস্যা করছে, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়।
  • পিসিআর (PCR) পরীক্ষাঃ এটা খুবই আধুনিক এবং sensitive (সংবেদনশীল) একটা পরীক্ষা। এর মাধ্যমে খুব অল্প পরিমাণ জীবাণুর উপস্থিতি detect (সনাক্ত) করা যায় এবং রোগের একেবারে সঠিক কারণ (যেমন ব্যাকটেরিয়ার কোন Strain বা কোনো Virus আছে কিনা) নির্ধারণ করা যায়।
  • এই পরীক্ষাগুলো সাধারণত মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র বা বিশেষায়িত ল্যাবরেটরিতে করা হয়। যখন প্রাথমিক লক্ষণ দেখে রোগ সনাক্ত করা কঠিন হয় বা রোগের কারণ নিখুঁতভাবে জানা জরুরি হয়ে পড়ে সঠিক চিকিৎসার জন্য, তখন এই পরীক্ষাগুলো করানো হয়।
লক্ষণগুলো চিনে রাখা এবং প্রয়োজনে এই পরীক্ষাগুলোর সাহায্য নেওয়া এই দুটো বিষয়ই আপনার মাছকে দ্রুত আর সঠিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। ওদের দিকে একটু খেয়াল রাখলেই ওরা ভালো থাকবে।

তথ্যসূত্রঃ অ্যাকোয়াটিক অ্যানিমাল হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ফিশারি ইনস্টিটিউট

মাছের ক্ষত রোগ প্রতিরোধের উপায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য যা আপনাকে জানতে হবে

মাছের যত্ন নেওয়াটা কিন্তু একটা ভালোবাসার কাজ। যখন মাছ চাষ করেন, তখন তাদের দিকে একটু নজর রাখতেই হয়, তাই না? কোনো কিছু অস্বাভাবিক মনে হলেই সেটাকে শুরুতে চিনে ফেলাটা খুব জরুরি একটা ধাপ। কারণ, রোগটা আসলে কী হয়েছে, সেটা যদি ঠিকমতো বুঝতে পারেন, তবেই তার সঠিক প্রতিকার বা চিকিৎসা করতে পারবেন। মাছের ক্ষত রোগ যখন আসে, তখন ওরা কিছু ইশারা দেয়। সেই চিহ্নগুলো দেখে আমরা অনেকটা আন্দাজ করতে পারি যে ওদের কষ্ট হচ্ছে। আমার মতে, একজন মাছ চাষি হিসেবে এই ইশারাগুলো চিনে রাখাটা আমাদের দায়িত্ব। তাহলে চলুন জেনে নিই, মাছের ক্ষত রোগের suspected (সন্দেহ) হলে আপনারা কী কী দেখে সেটা বুঝতে পারবেন। 

পানির গুণমান ঠিক রাখা


  • ভাবুন তো, মাছদের তো ২৪ ঘণ্টাই পানিতে থাকতে হয়! পানিটাই হলো তাদের ঘরবাড়ি। তাই এই ঘরবাড়িটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর স্বাস্থ্যকর রাখাটা সবচেয়ে জরুরি।
  • চেষ্টা করবেন সপ্তাহে অন্তত ২০ থেকে ৩০% পানি পরিবর্তন করতে। পুরোটা না পারলেও কিছুটা নতুন পানি যোগ করলে পরিবেশটা ভালো থাকে।
  • পানির pH লেভেলটা মেপে দেখবেন। এটা ৭ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করবেন। pH ঠিক থাকলে মাছেরাสบาย (স্বাভাবিক) থাকে।
  • অ্যামোনিয়া আর নাইট্রাইটের মতো ক্ষতিকর জিনিসগুলো যেন পানিতে বেশি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এগুলো মাছের জন্য বিষাক্ত।
  • আর মাছের শ্বাস নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন আছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করুন। প্রতি লিটার পানিতে ৫ পিপিএম বা তার বেশি অক্সিজেন থাকাটা আদর্শ। অক্সিজেন কম হলে মাছেরা stressed (স্ট্রেসড) হয়ে যায়, আর রোগ সহজে ধরে।

ঠিকমতো খাবার দেওয়া


  • সুস্থ থাকার জন্য যেমন আমাদের পুষ্টিকর খাবার দরকার, মাছেরও তাই! ভালো খাবার তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • সবসময় ভালো মানের খাবার ব্যবহার করুন। কম দামি বা নিম্নমানের খাবারে পুষ্টি কম থাকে, রোগও হতে পারে।
  • মাছের খাবার যখন তৈরি করবেন, চেষ্টা করবেন তাতে যেন ভিটামিন সি আর ভিটামিন ই মেশানো থাকে। জানেন তো, এই ভিটামিনগুলো মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুণ সাহায্য করে, ওদের শরীরকে ভেতর থেকে মজবুত করে তোলে।
  • কিন্তু খাবার দেওয়ার সময় quantity-র (পরিমাণের) দিকে খেয়াল রাখবেন। অতিরিক্ত খাবার পানিতে নষ্ট হয়ে যায়, যা পানিকে নোংরা করে আর রোগ তৈরি করে। Overfeeding (অতিরিক্ত খাওয়ানো) একদম ভালো না।
  • সপ্তাহে একদিন বা দুদিন মাছকে না খাইয়ে উপোস রাখতে পারেন। এতে তাদের হজমশক্তি ভালো হয় আর পুকুরের পরিবেশও কিছুটা বিশ্রাম পায়।

পুকুর বা ট্যাংকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা


  • পানির গুণমানের পাশাপাশি পুকুর বা ট্যাংকের ভেতরের পরিবেশটাও পরিষ্কার রাখা জরুরি। পুকুরের তলায় যেন মরা পাতা, অতিরিক্ত খাবার বা অন্য কোনো আবর্জনা জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। নিয়মিত পুকুরের তলা পরিষ্কার রাখুন।
  • যদি কোনো মাছ অসুস্থ দেখেন বা মরা দেখেন, তাহলে দ্রুত সেটা পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলুন। একটা অসুস্থ বা মরা মাছ পুরো পুকুরে রোগ ছড়িয়ে দিতে পারে।
  • যদি কোনো মাছের মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখেন, তাহলে দেরি না করে দ্রুত তাকে আলাদা করে ফেলুন। Quarantine (কোয়ারেন্টাইন) করাটা খুব জরুরি, যাতে রোগটা অন্য মাছে না ছড়ায়।
  • নতুন মাছ যখন আনবেন, সরাসরি পুরনো পুকুরে না ছেড়ে কিছুদিন আলাদা ট্যাংকে কোয়ারেন্টাইনে রাখুন। দেখুন তাদের কোনো সমস্যা আছে কিনা। সুস্থ মনে হলে তবেই প্রধান পুকুরে ছাড়ুন। এটা রোগ ঢোকা আটকাতে খুবই কার্যকরী।

মাঝে মাঝে প্রতিরোধমূলক ট্রিটমেন্ট


  • কিছু সহজ জিনিস মাঝে মাঝে ব্যবহার করলে মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। মাসে একবার পুকুরে বা ট্যাংকে পরিমাণ মতো লবণ ট্রিটমেন্ট দিতে পারেন। এটা হালকা জীবাণু আর পরজীবী দূর করতে সাহায্য করে।
  • ক্যালসিয়াম আর পটাশিয়াম যুক্ত সাপ্লিমেন্ট বা পরিপূরক ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো মাছের শরীরকে শক্তিশালী করে।
  • রোগ প্রতিরোধক প্রোবায়োটিক ব্যবহার করাও খুব ভালো। প্রোবায়োটিক উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা মাছের হজমে সাহায্য করে আর রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াদের সাথে লড়াই করে।
তথ্যসূত্রঃ সিএসআইআরও অ্যাকোয়াকালচার, বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট

ব্যক্তিগত মতামতঃ মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ ও জনপ্রিয় কিছু ঔষধের তালিকা

মাছের ক্ষত রোগের ঔষধ নিয়ে এতক্ষণ আমরা অনেক কিছুই জানলাম, তাই না? বিভিন্ন রকম রাসায়নিক, অ্যান্টিবায়োটিক, আর কিছু সহজ ঘরোয়া পদ্ধতির কথা বললাম। সত্যি বলতে, যখন দেখি আমাদের প্রিয় মাছগুলো কষ্ট পাচ্ছে, তখন যে কোনো মূল্যে ওদের বাঁচাতে ইচ্ছে করে। আর সেই সময়ে এই ঔষধগুলো বা চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো যেন আমাদের হাতে থাকা একটা বড় ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। আমার মনে হয়, এই জ্ঞানটুকু থাকাটা যেকোনো মাছ চাষির জন্য খুব জরুরি। 

কিন্তু এতসব জানার পর আমার ভেতরের আমিটা বারবার একটা কথাই বলছে ঔষধ ব্যবহার করাটা জরুরি যখন রোগ হয়ে গেছে, কিন্তু রোগটা যাতে না হয় সেই চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে বেশি শান্তির। পুকুরের পানির যত্ন নেওয়া, ভালো খাবার দেওয়া, নতুন মাছ আনলে একটু আলাদা করে রাখা এই ছোট ছোট কাজগুলো আসলে হাজার টাকার ঔষধের চেয়েও বেশি দামি। 

আর যদি ঔষধ ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে যে সতর্কতাগুলোর কথা বললাম, সেগুলো প্লিজ, প্লিজ মেনে চলবেন। মাত্রা ঠিক আছে কিনা, নিজের সুরক্ষা নিচ্ছেন কিনা, খাবার মাছে ব্যবহার করলে নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করছেন কিনা এই বিষয়গুলো অবহেলা করার মতো নয়। আপনার একটুখানি সচেতনতা আপনার মাছ আর আমাদের সবার ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত রাখবে। মাছেরা সুস্থ থাক, আর আপনার মুখে হাসি থাকুক  এটাই আমার চাওয়া।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব বাজ ব্লগিং ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url