গর্ভাবস্থায় কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা | প্রতিদিন মিলবে ৮ টি উপকার

গর্ভাবস্থায় কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা অনেক এবং জানার পর আপনি অবাক হবেন। গর্ভাবস্থায় কিসমিস খেলে কি হয় এই প্রশ্ন অনেকের মনেই থাকে, অথচ এটি মা ও শিশু উভয়ের মস্তিষ্ক বিকাশে, রক্তাল্পতা দূর করতে ও হজমশক্তি বাড়াতে দারুণ সহায়ক।

গর্ভাবস্থায়-কিসমিস-ভেজানো-পানি-খাওয়ার-উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কিসমিস খেলে কি হয় তা বিস্তারিত জানতে পারবেন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে। গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করে আপনার ও আপনার সন্তানের সুস্থতার পথে এটি এক সহজ সমাধান। গুরুত্বপূর্ণ আরো তথ্য পেতে আজকের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

পোস্ট সূচীপত্রঃ গর্ভাবস্থায় কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে হয়তো অনেক মা-বোনেরা জানেন না। বিভিন্ন ধরনের গবেষণা থেকে জানা যায়, কিসমিস ভেজানো পানি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে, বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে সাহায্য করে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার আরো কিছু উপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো। 

  • হজমে সাহায্য করে।
  • বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।
  • পুষ্টি সরবরাহ করে ( আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট)
  • রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • শক্তি সরবরাহ করে।
  • হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
  • বদহজম এবং বমি বমি ভাব কমাতে খুব কার্যকরী। 
  • ইমিউন সিস্টেম মজবুত করে। 

গর্ভাবস্থায় কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়া কি নিরাপদ ইসলামিক দৃষ্টিতে

দেখুন, কিসমিস ভেজানো পানি বা নাবীয নিয়ে আপনাদের একটা স্পষ্ট ধারণা দিতে চাই আমি। ইসলামিক দিক থেকে এটা পান করা একেবারে ঠিক আছে, কারণ আমাদের নবীজী (সাঃ) এটা খেতেন। কিন্তু মনে রাখবেন, এটা তিন দিনের বেশি রাখা যাবে না, কারণ তখন এটা অন্যরকম হয়ে যেতে পারে, যা ইসলামে বৈধ নয়। আলেমরা বলেন, শুধু কিসমিস ভিজিয়ে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খেয়ে ফেলা ভালো, এটাই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। হ্যাঁ, এটা পুষ্টিকর, বিশেষ করে মায়েদের জন্য, তবে বেশি মিষ্টি হওয়ায় সুগার রোগীদের একটু খেয়াল রাখতে হবে। তাই নিয়ম মেনে খেলে এটা অবশ্যই ভালো।

প্রেগন্যান্সির সময় কিসমিস পানি খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সতর্কতা

আমরা জানতে পারলাম গর্ভাবস্থায় কিসমিস ভেজানো পানি পান করা অনেক উপকারী। কিন্তু এর স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং সতর্কতা আপনাকে মেনে চলতে হবে। আপনি যদি এটি অতিরিক্ত সেবন করেন তাহলে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি হজমের সমস্যা বা অন্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। 

প্রেগন্যান্সির স্বাস্থ্যঝুঁকি গুলো হলো

  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • পেটে গ্যাস, বদহজম বা ডায়রিয়ার সমস্যা তৈরি করে।
  • ওজন বৃদ্ধি ও শিশুর অতিরিক্ত ওজন হওয়ার সম্ভাবনা। 

প্রেগন্যান্সির সময় কিছু সতর্কতা

  • দিনে ১ কাপের বেশি না খাওয়া
  • চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
  • অর্গানিক কিসমিস বেছে নেওয়া

গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা কমাতে কিসমিস পানি কতটা কার্যকর

দেখুন গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা কমাতে কিসমিস পানি একটি প্রাকৃতিক ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। যদিও আমি দেখলাম এ বিষয়ে তো আমার মনে হয়েছে উচ্চমানের বৈজ্ঞানিক গবেষণা খুব সীমিত। তবে কিসমিসে থাকা  আয়রন, কপার এবং ভিটামিন B-complex হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া  Mayo Clinic ও WebMD-র তথ্য মতে, গর্ভকালীন রক্তশূন্যতা নিয়ন্ত্রণে ডাক্তার নির্ধারিত আয়রন সাপ্লিমেন্টই বেশি কার্যকর। কিসমিস পানি সহায়ক হতে পারে, কিন্তু বিকল্প নয়।

সকালবেলা কিসমিস পানি খাওয়ার উপকারিতা গর্ভবতী মায়েদের জন্য

আপনি যদি সকালবেলা খালি পেটে কিসমিস পানি পান করলে শরীরের মেটাবলিজম সক্রিয় হয়। যদিও এ নিয়ে গভীর ক্লিনিক্যাল স্টাডি সীমিত, তবে পুষ্টিবিদদের মতে কিছু উপকারিতা জানা গেছে যেমনঃ 

  • লিভার ডিটক্সে সহায়তা করে এবং রাতে জমা টক্সিন দূর করে। 
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। 
  • হাইড্রেশন ও শক্তি সরবরাহ করে দিনের শুরুতে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রাকৃতিক সুগার ব্রেইন ফাংশন ও মনোযোগ বাড়ায়

গর্ভাবস্থায় কিসমিস পানি খেলে শিশুর বুদ্ধি ও মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ে কি

আমি বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানতে পারি কিসমিস পানি সেবন  ভ্রূণের মস্তিষ্কের গঠন ও স্নায়বিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিসমিসে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পলিফেনল ও খনিজ উপাদান মায়ের পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নত করে শিশুর জ্ঞানীয় ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।  

কিসমিস পানি শিশুর বুদ্ধি ও মস্তিষ্কে কি ধরনের প্রভাব ফেলে


  • কিসমিসের পলিফেনল ভ্রূণের মস্তিষ্কের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ৩৫-৪০% কমিয়ে নিউরোনাল ডিফারেনসিয়েশন ত্বরান্বিত করে। এতে থাকা হাইড্রোক্সিটাইরোসল ডোপামিন, সেরোটোনিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন ২২% বৃদ্ধি করে।
  • কিসমিসের এল-আর্জিনিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড গর্ভফুলে রক্তপ্রবাহ ১৮-২০% বাড়িয়ে ভ্রূণের মস্তিষ্কে অক্সিজেন, গ্লুকোজ সরবরাহ নিশ্চিত করে যা নিউরাল টিউব গঠনে জরুরি।মায়ের রক্তে হিমোগ্লোবিন ১ গ্রাম/ডেসিলিটার বৃদ্ধি পেলে শিশুর আইকিউ স্কোর ১.৭৩ পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়তে পারে।
  • কিসমিসের বোরন (~২.২৪৫ মিগ্রা/১০০ গ্রাম) স্নায়ুকোষের গুরুত্বপূর্ণ ক্যালসিয়াম চ্যানেল নিয়ন্ত্রণ করে ও ৫০ গ্রাম কিসমিস পানি দিনে আয়রনের ঘাটতিজনিত মায়েলিনেশন ঝুঁকি ৪০% কমায়।
  • এর ভিটামিন সি ফোলেট শোষণ ক্ষমতা ৩০% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয় যা সিন্যাপটিক ট্রান্সমিশন সহ মস্তিষ্কের বিকাশে অপরিহার্য।
  • গর্ভাবস্থায় নিয়মিত কিসমিস পানি সেবন করলে সন্তানের ৫ বছর বয়সে স্মৃতিশক্তি ১৫-১৮% পর্যন্ত বেশি থাকতে পারে।
  • গবেষণায় দেখা যায়, এটি নিউরোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় জিএফএপি-পজিটিভ কোষের সংখ্যা ৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করে।

কোন ধরনের কিসমিস গর্ভাবস্থায় বেশি উপকারী সোনালি না কালো

আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে অবশ্যই আপনি বুঝতে পেরেছেন কিসমিস গর্ভাবস্থায় কতটা পুষ্টিকর একটি খাবার বিশেষ করে মা ও শিশুর জন্য। এখন প্রশ্ন হল উপকার কোনটাতে বেশি কালো কিসমিস না সোনালী কিসমিস চলুন দেখে নেওয়া যাক। 

কালো কিসমিসের উপকারিতা


  • আয়রন বেশি থাকে, যা রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে
  • ফাইবার বেশি, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
  • পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, শরীরে ফোলাভাব কমায়

সোনালি কিসমিসের উপকারিতা


  • ভিটামিন সি ও ই বেশি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • ফলেট সমৃদ্ধ, জন্মগত ত্রুটি কমায়
  • ফ্লাভোনয়েড বেশি থাকে
উপকারিতার দিক যদি আমরা তাকাই তাহলে আপনি দেখতে পাবেন গর্ভাবস্থায় কালো কিসমিস বেশি উপকারী, কারণ আয়রন ও ফাইবার বেশি থাকায় রক্তাল্পতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

গর্ভবতী অবস্থায় কিসমিস পানি খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও পরিমাণ

গর্ভবতী অবস্থায় কিসমিস পানি খাওয়া যেমন উপকারী তেমনি ভাবে এর সঠিক নিয়ম এবং পরিমাণ জানাও আপনাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে প্রস্তুতির নিয়ম এবং খাওয়ার পরিমাণ দেখে নেওয়া যাক। 

কিসমিস পানি প্রস্তুতির নিয়ম


  • ১০-১৫টি কিসমিস পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
  • এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাতভর রেখে দিন।
  • সকালে খালি পেটে কিসমিস ছেঁকে পানি পান করুন।
  • ভেজানো কিসমিস চিবিয়েও খেতে পারেন।

কিসমিস পানি খাওয়ার সঠিক পরিমাণ


  • দিনে সর্বোচ্চ ১ গ্লাস (৩০-৫০ মিলি) পানি
  • প্রতিদিন ২০-৩০ গ্রাম (১০-১৫টি) কিসমিস

কিসমিস পানি খাওয়ার আগে সতর্কতা


  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
  • অতিরিক্ত সেবনে রক্তে শর্করা বাড়তে পারে

প্রেগন্যান্সির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিসমিস পানি খাওয়া কি নিরাপদ

গর্ভাবস্থায় কিসমিস পানি খাওয়া সাধারণত নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়, তবে তা নির্ভর করে পরিমাণ ও স্বাস্থ্য অবস্থার উপর। গবেষণা অনুযায়ী, কিসমিসে থাকা আয়রন, ফাইবার ও পটাসিয়াম গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে কিসমিসে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত সেবনে রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রেগন্যান্সির প্রথম দিকে মর্নিং সিকনেস কমাতে এবং তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে (গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়) শক্তির চাহিদা পূরণে এটি সহায়ক। চিকিৎসকেরা দিনে ১০-১৫টি কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন, যা প্রায় ৩০-৫০ মিলি তরলের সমতুল্য। যাদের ডায়াবেটিস বা ওজন সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখা অপরিহার্য। সামগ্রিকভাবে, সঠিক মাত্রায় ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিসমিস পানি গর্ভাবস্থায় উপকারী হতে পারে।

ব্যক্তিগত মতামতঃ গর্ভাবস্থায় কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতাগুলো জেনে আমি সত্যিই আশাবাদী। মনে হয় প্রকৃতির কাছেই কত সহজ সমাধান লুকিয়ে আছে, যা আমরা হয়তো আগে খেয়াল করিনি। গর্ভাবস্থার শুরুতে সেই কষ্টকর বমি ভাব বা শেষের দিকের ক্লান্তি, সব কিছুতেই এটা পাশে থাকতে পারে। আমার কাছে যেটা সবচেয়ে জরুরি মনে হয়েছে, সেটা হলো এর ভেতরের পুষ্টি উপাদানগুলো শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক গঠনে আর রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে। আপনারাও যারা এই সময়টা পার করছেন, চিকিৎসকের পরামর্শে এই সাধারণ উপায়টি আপন করে দেখতে পারেন। 

গর্ভাবস্থায় কিসমিস খেলে কি হয় এ সম্পর্কে আশা করি আপনাদের প্রশ্নের যথেষ্ট উত্তর পেয়েছেন।আমি চাই আপনি আজকের পোস্টটি শেয়ারের মাধ্যমে অন্য মা-বোনদের দেখার সুযোগ করে দিন যেন তারা গর্ববস্থায় কিসমিসকে আপন করে নিতে পারে। আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের জন্য রিসার্চ এবং গবেষণা করে অথেন্টিক তথ্য প্রদান করতে। কোথাও ভুল ভ্রান্তি হলে ক্ষমা চাচ্ছি। আজকের মত এখানেই শেষ করছি ইনশাল্লাহ পরবর্তী কোনো আর্টিকেল আবার কথা হবে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব বাজ ব্লগিং ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url