পড়া মনে থাকে না কেন? পড়া মনে রাখার গোপন রহস্য

পড়া মনে রাখার গোপন রহস্য জানতে চান কি? অনেকেই বলেন পড়া মনে থাকে না কেন, আর এটা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পরীক্ষিত কিছু উপায় আছে যা আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। আসল রহস্যটা লুকিয়ে আছে আপনার মস্তিষ্কের কাজ বোঝার মধ্যে।

পড়া-মনে-রাখার-গোপন-রহস্য

এই আর্টিকেলে আপনি জানতে পারবেন কীভাবে পড়া মনে রাখার সমস্যা দূর করবেন। সঠিক কৌশল, উপযুক্ত সময়, ঘুম আর পুষ্টিকর খাবার কীভাবে আপনার মনে রাখার ক্ষমতাকে নতুন জীবন দিতে পারে, তার সব তথ্য সহজ ভাষায় আজকের পোস্টে পাবেন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পড়া মনে রাখার গোপন রহস্য 

পড়া মনে রাখার গোপন রহস্য

পড়া মনে রাখা যেন এক অধরা স্বপ্ন অনেকের কাছে। আমরা কত কিছুই না পড়ি, কিন্তু কিছুদিন পরেই কেমন যেন ধোঁয়াটে হয়ে যায় সব। সত্যি বলতে, পড়া মনে রাখার গোপন রহস্য কিন্তু খুব কঠিন নয়। কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করলে স্মৃতিশক্তি অনেক বাড়ানো যায়, যা আমি নিজেও বিশ্বাস করি। জ্ঞান আহরণের এই পথে এই কৌশলগুলো আমাদের বড় শক্তি জোগায়। পড়া মনে রাখার জন্য কিছু কার্যকর উপায় নিচে আপনাদের জন্য তুলে ধরছি।  

  • পড়া শুরুর আগে আপনি বিষয়টি নিয়ে যা জানেন, তা একটি খালি কাগজে লিখে ফেলুন। পড়া শেষে নতুন তথ্য যোগ করুন, একে আমি ব্ল্যাংক শীট পদ্ধতি বলি।
  • পড়া বিষয়টি সহজ ভাষায় অন্যকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনার নিজেরই পরিষ্কার ধারণা জন্মাবে, এটি ফাইনম্যান পদ্ধতি।
  • ২৫ মিনিট মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, তারপর ৫ মিনিটের বিরতি নিন। এটি পোমোডোরো পদ্ধতি নামে পরিচিত, খুবই কার্যকর।
  • একটানা না পড়ে বিরতি নিয়ে একই জিনিস বারবার পড়ুন, পুনরাবৃত্তি স্মৃতিকে মজবুত করে।
  • পড়া বিষয়টিকে মনে মনে ছবি বা গল্পের মতো কল্পনা করুন, একে বলে দৃশ্যায়ন কৌশল।
  • বড় ও জটিল বিষয়গুলো ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন, দেখবেন সহজে আয়ত্ত করতে পারছেন।
  • পড়া শেষে নিজেকে প্রশ্ন করুন, কতটা মনে আছে বা বুঝেছেন। এতে ঘাটতি বুঝতে পারবেন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, ভালো ঘুম আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ক্লাসে বা পড়ার সময় সক্রিয় থাকুন, মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং দরকারি বিষয় নোট নিন।

কম সময়ে বেশি পড়া মনে রাখার উপায় কী? 

পড়াশোনায় ভালো করতে চাইলে যা পড়ছি তা মনে রাখা খুব দরকার। শুধু বই খুলে বসে থাকলেই হয় না, মস্তিষ্কে তথ্যগুলোকে দীর্ঘস্থায়ী করার কিছু বিশেষ কৌশল আছে। আমি মনে করি, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আর কিছু অভ্যাস যদি আমরা নিজেদের জীবনে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে খুব সহজেই পড়া মনে রাখার ক্ষমতা অনেক বাড়াতে পারবো। কম সময়ে বেশি পড়া মনে রাখার জন্য কিছু কার্যকরী কৌশল আমি আপনাদের কাছে সহজ ভাষায় তুলে ধরছি। 

  • কর্নেল নোট পদ্ধতিঃ আপনার খাতার পাতাকে মূল নোট, প্রশ্ন আর সারাংশ লেখার জন্য তিন ভাগে ভাগ করুন। এতে তথ্য সংগঠিত হয় ও পুনরালোচনা সহজ হয়।
  • খণ্ডায়িত পাঠঃ বড় অধ্যায় বা বিষয়কে ছোট ছোট অংশে ভেঙে পড়ুন। এতে মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা ৬৫% বৃদ্ধি পায়।
  • এসকিউ৩আর কৌশলঃ সার্ভে, প্রশ্ন তৈরি, গভীর পড়া, স্ব-ব্যাখ্যা ও রিভিউয়ের মাধ্যমে পড়া মস্তিষ্কে স্থায়ী হয়।
  • মেমোরি প্যালেসঃ পরিচিত স্থানের মানসিক ছবির সাথে পাঠ্যবস্তু জুড়ে মনে রাখার প্রাচীন গ্রিক পদ্ধতি এটি।
  • স্পেসড রিপিটিশনঃ অ্যান্কি বা মেমরাইজ অ্যাপ ব্যবহার করে ভোলার বক্ররেখা অনুযায়ী নির্দিষ্ট বিরতিতে পুনরালোচনা করুন।
  • ইন্টারলিভড প্র্যাকটিসঃ গণিত-ইতিহাসের মতো ভিন্ন বিষয় একসাথে পড়ে নিউরাল প্লাস্টিসিটি বৃদ্ধি করুন।
  • রঙের ব্যবহারঃ মার্কার দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইন চিহ্নিত করলে আপনার ভিজ্যুয়াল মেমোরি সক্রিয় হয়।
  • টুইটার সামারিঃ ১৪০ শব্দের মধ্যে সারমর্ম লিখলে মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স সক্রিয় হয়।
  • থ্রিডি মাইন্ড ম্যাপ: ধারণাগুলোর মধ্যে সম্পর্ক চিত্রিত করলে স্মৃতিতে তথ্য ৫০% বেশি স্থায়ী হয়।
  • সক্রিয় প্রত্যাহারঃ পড়া শেষে বই বন্ধ করে নিজেকে প্রশ্ন করে উত্তর দেওয়ার অভ্যাস এটি।
  • পরিবেশ নিয়ন্ত্রণঃ পর্যাপ্ত আলো ও নিয়মিত জায়গায় পড়লে মনোযোগ ৪০% পর্যন্ত বাড়ে।
  • স্নায়ুপুষ্টিকর খাদ্যঃ কিশমিশের বোরন ও ডার্ক চকলেটের ফ্লেভোনয়েড মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে।

দৈনিক কত ঘন্টা পড়া উচিত? 

পড়ার উপযুক্ত সময় কত, এ নিয়ে গবেষণা নানা কথা বললেও আমি বলি বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ দিনে ৪-৬ ঘণ্টা ভালোভাবে পড়াকেই ভালো বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ক্রেডিটে ২-৩ ঘণ্টা নিজে পড়া লাগে, যা সপ্তাহে ১২ ক্রেডিটে দিনে ৫-৬ ঘণ্টা হয়। তবে মনে রাখার কার্যকর পদ্ধতি স্পেসড রিপিশন (নির্দিষ্ট বিরতিতে বারবার পড়া) অ্যাক্টিভ রিকল (নিজে নিজে মনে করার চেষ্টা করা) ব্যবহার করলে ৩-৪ ঘণ্টাও যথেষ্ট। বাংলাদেশি গবেষণায় দেখা গেছে, মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা ২-৩ ঘণ্টা পড়েই সফল হয়। তাই আমি মনে করি, সময়ের চেয়ে মনোযোগ আর নিয়ম মেনে বারবার পড়াই বেশি জরুরি।

পড়া মনে থাকে না কেন? 

আমরা অনেকেই অভিযোগ করি যে পড়া মনে থাকে না। আসলে মস্তিষ্ক খুব জটিলভাবে কাজ করে, আর ভুলে যাওয়াটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, পড়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা প্রায় ৭০% তথ্য ভুলে যাই, কারণ মস্তিষ্ক অপ্রয়োজনীয় জিনিস মুছে ফেলে। কিন্তু কিছু কারণে আমাদের দরকারি পড়াগুলোও মনে রাখতে সমস্যা হয়। এর প্রধান কারণগুলো নিচে দেখে নিন।  

  • মনোযোগের অভাবঃ মোবাইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নোটিফিকেশন মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সকে বিভ্রান্ত করে, এতে কার্যক্ষমতা প্রায় ৪০% কমে যায়।
  • নিষ্ক্রিয় পড়ার পদ্ধতিঃ শুধু চোখ বুলিয়ে বা উচ্চস্বরে পড়াটা যথেষ্ট নয়। সক্রিয় রিকল পদ্ধতি, যেখানে আপনি নিজে নিজে মনে করার চেষ্টা করেন, তা প্রায় ৩ গুণ বেশি কার্যকর।
  • নিউরোট্রান্সমিটারের সমস্যাঃ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা পুষ্টিকর খাবার বাদ দিলে অ্যাসিটাইলকোলিন উৎপাদন কমে যায়, যা মনে রাখার জন্য খুব জরুরি। এতে নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
  • পর্যাপ্ত পুনরাবৃত্তি না করাঃ গবেষণা বলে, পড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ১০ মিনিটের একটি রিভিশন স্মৃতিতে প্রায় ৬৫% তথ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। পুনরাবৃত্তির অভাবে আমরা ভুলে যাই।
  • দৃষ্টিতে সমস্যাঃ প্রায় ২০% ক্ষেত্রে চোখের অস্বস্তি বা লো ভিশনের মতো সমস্যা পড়ার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে বাধা দেয়।
  • মানসিক চাপঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, যা মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশে নতুন স্মৃতি তৈরিতে বা নিউরোজেনেসিসে বাধা দেয়।
  • ভুল সময়ে পড়াঃ আমাদের দেহের নিজস্ব সার্কাডিয়ান রিদম বা ঘুম-জাগরণ চক্রের বিপরীতে গিয়ে পড়লে তথ্য মস্তিষ্কে এনকোড হওয়ার ক্ষমতা প্রায় ৩০% কমে যেতে পারে।

কোন সময় পড়লে পড়া মনে থাকে?

পড়া কোন সময় পড়লে বেশি মনে থাকে, এটা অনেকের প্রশ্ন। মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সারাদিনের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়। গবেষণা বলে, ঠিক সময়ে পড়লে তথ্য স্মৃতিতে স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আমি মনে করি এটা জেনে রাখা দরকার। নিচে কার্যকর কিছু সময় দেখুন।  

  • সকাল ১০টা–১২টাঃ কর্টিসলের প্রভাবে মনোযোগ বেশি থাকে, গাণিতিক বা জটিল বিষয় পড়ার সেরা সময়। এছাড়া আপনি ফজরের নামাজের পর পড়াশোনা করলে সেটি বেশি কার্যকর। 
  • দুপুর ১টা–৩টাঃ সার্কাডিয়ান রিদম অনুযায়ী স্মৃতিশক্তি শীর্ষে থাকে, এই সময়ে পড়লে ৩০% বেশি মনে থাকতে পারে।
  • সন্ধ্যা ৫টা–৭টাঃ রক্তে অক্সিজেন বাড়ায় হিপোক্যাম্পাসের কাজ বাড়ে, যা তথ্য মনে রাখতে সাহায্য করে।
  • ঘুমানোর আগের ১ ঘণ্টাঃ এই সময়ে মস্তিষ্কের সিন্যাপটিক প্রুনিং নতুন তথ্য স্থায়ী করে, তাই ঘুমোতে যাওয়ার আগে পড়াটা কাজে দেয়।

পড়াশোনার খারাপ সময় কোনটি?

আমরা দেখলাম কিছু সময়ে পড়লে বেশি মনে থাকে। তেমনই কিছু সময় আছে যখন পড়া আসলে সহজে মাথায় ঢোকে না। মস্তিষ্কের কাজ দিনের বেলায় বদলায়, যা বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও দেখা গেছে। শরীরের প্রাকৃতিক ছন্দ ও হরমোন এই সময়ে স্মৃতিশক্তিকে কম প্রভাবিত করে। পড়াশোনার জন্য কিছু অকার্যকর সময় নিচে দেওয়া হল। 

  • রাত ২টা–৪টাঃ এই গভীর রাতে মেলাটোনিন হরমোনের প্রভাবে মস্তিষ্কের সক্রিয়তা প্রায় ৭০% কমে যায়।
  • দুপুর ১টা–৩টাঃ দুপুরের ভারী খাবার পরিপাকের জন্য রক্ত পেটে কেন্দ্রীভূত হয়, এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে।
  • টানা ৪ ঘণ্টার বেশি পড়াঃ গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা দীর্ঘসময় পড়লে মানসিক ক্লান্তি ৫০% বেড়ে যায়।
  • সন্ধ্যা ৭টা–৯টাঃ সার্কাডিয়ান রিদম অনুযায়ী এই সময়ে মস্তিষ্ক বিশ্রামের জন্য তৈরি হতে শুরু করে।

বিছানায় শুয়ে পড়া উচিত নয় কেন?

বিছানায় শুয়ে পড়তে হয়তো প্রথমে খুব আরাম লাগে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এটা আসলে আমাদের শরীর ও পড়ার দক্ষতার জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর। যদিও আরাম মনে হয়, গবেষণায় দেখা গেছে বিছানার পরিবেশ আমাদের মস্তিষ্কের কাজ ও শারীরিক সুস্থতার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। বিছানায় শুয়ে পড়ার কিছু ক্ষতিকর দিক নিচে এক নজরে দেখে নিন। 

  • মনোযোগের অভাবঃ বিছানা সাধারণত ঘুম ও বিশ্রামের জায়গা, তাই এখানে শুয়ে পড়লে মস্তিষ্ক সক্রিয়ভাবে মন দিয়ে তথ্য গ্রহণ করতে পারে না সহজে।
  • দৃষ্টি ও ঘাড়ের সমস্যাঃ শুয়ে বই বা ল্যাপটপ দেখার জন্য ঘাড় বাঁকাতে হয়, যা মাংসপেশিতে টান ও ব্যথা সৃষ্টি করে, দৃষ্টিশক্তিও কমিয়ে দিতে পারে।
  • মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ কমেঃ শুয়ে থাকার ভঙ্গিতে মস্তিষ্কে অক্সিজেনসহ রক্ত সরবরাহ কম হয়, ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে বা পড়া মনে রাখতে কষ্ট হয়।
  • ঘুমের ব্যাঘাতঃ পড়ার জন্য বিছানা ব্যবহার করলে আমাদের মস্তিষ্ক বিছানাকে আর শুধু ঘুমের সাথে যুক্ত করতে পারে না, ফলে সহজে ঘুম আসতে চায় না বা অনিদ্রা দেখা দেয়।
  • দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিঃ ভুল ভঙ্গিতে শুয়ে দীর্ঘসময় পড়লে কোমর ও মেরুদণ্ডের উপর চাপ পড়ে, যা থেকে পরবর্তীতে স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

ঘুমানোর আগে পড়াশোনা করা কি ভালো?

আমার মনে হয়, ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটু পড়াটা বেশ কার্যকর হতে পারে। কারণ ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক নতুন শেখা তথ্যগুলোকে গোছায় আর স্মৃতিতে পাকাপাকি করে নেয়। গবেষণা বলে, ঘুমের আগে শেখা তথ্য মস্তিষ্কের এক অংশ থেকে অন্য অংশে যায়, যা দীর্ঘ সময় মনে রাখতে সাহায্য করে। লাফবরো বিশ্ববিদ্যালয় দেখিয়েছে, শেখার পর ঘুমালে ১০ ঘণ্টা পর মনে রাখার ক্ষমতা ৩০% বাড়ে।

নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক স্মৃতিকে আরও শক্ত করে, তাই ২৪ ঘণ্টা পরও শেখা তথ্য ৫০% বেশি মনে থাকে। তবে খুব জটিল জিনিস রাতে পড়লে মনোযোগ কমতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, ঘুমোনোর ১-২ ঘণ্টা আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রিভিশন দিলে মনে বেশি থাকে।

পড়াশোনা মনে রাখার জন্য কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত?

পড়া মনে রাখার জন্য ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম বিজ্ঞানসম্মতভাবে খুব জরুরি, আমি বিশ্বাস করি এটা মেনে চলা উচিত। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, গভীর ঘুম ও REM ( Rapid Eye Movement বা চোখের দ্রুত নড়াচড়া ) ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নতুন তথ্য স্থায়ীভাবে মনে গেঁথে নেয়। ক্যামব্রিজের সমীক্ষায় ৩৮-৭৩ বছর বয়সীদের মধ্যে ৭ ঘণ্টা ঘুমে সেরা স্মৃতিশক্তি দেখা গেছে। ৪ ঘণ্টার কম ঘুম মনে রাখার ক্ষমতা ৭০% নষ্ট করে দেয়, যা পরের রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমে কিছুটা ঠিক হতে পারে। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন তরুণদের জন্য ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরি বলেছে, কারণ এটি স্মৃতিকে মস্তিষ্ক জুড়ে ছড়াতে সাহায্য করে। 

শোনার পর কত শতাংশ পড়া মনে থাকে?

শুধু শুনলে কতটুকু মনে থাকে, জানেন? গবেষণায় দেখা গেছে মাত্র ৫-১০% তথ্য মনে থাকে শুধু শুনে। ন্যাশনাল ট্রেনিং ল্যাবরেটরিজ বলছে, লেকচার শোনার সময় মস্তিষ্ক তেমন সক্রিয় থাকে না। তবে সক্রিয়ভাবে শুনলে, যেমন আলোচনা বা প্রশ্ন করলে, মনে থাকে ৭৫-৯০% পর্যন্ত। অডিও-ভিজুয়াল উপকরণ ব্যবহার করলে ২০% এবং অন্যদের শেখালে ৯০% তথ্য স্থায়ী হয়। তাই আমি বলি, মন দিয়ে শুনুন আর যুক্ত থাকুন, তবেই বেশি মনে রাখতে পারবেন। 

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য কোন ভিটামিনটি গুরুত্বপূর্ণ?

মস্তিষ্কের কাজ আর মনে রাখার জন্য কিছু ভিটামিন খুব দরকারি, আমি এটা বিশ্বাস করি। গবেষণাগুলোও তাই বলে। ভিটামিনের অভাব হলে মস্তিষ্কের নিউরাল সংযোগ দুর্বল হতে পারে এবং স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়তে পারে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ডিম, মাছ ও সবুজ শাকসবজিতে এসব ভিটামিনের প্রাকৃতিক উৎস রয়েছে। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন দেখে নিন। 

  • বি১২ঃ এটা হিপোক্যাম্পাসের গঠন উন্নত করে আর স্নায়ুসংকেত পাঠাতে সাহায্য করে।
  • বি৬ঃ সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে এটা লাগে, যা মনে রাখতে সাহায্য করে।
  • ফোলেট (বি৯) -- এটা হোমোসিস্টেইন মাত্রা ঠিক রাখে আর হিপোক্যাম্পাসে নতুন স্নায়ুকোষ তৈরিতে সাহায্য করে।
  • ডিঃ মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে স্নায়ুকোষের কাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

পড়া মনে রাখার জন্য কি খাওয়া উচিত?

আমাদের মস্তিষ্ককে ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার খুব জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, কিছু নির্দিষ্ট খাবার আছে যা খেলে আমাদের মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে। গবেষণাগুলোও তাই বলে, এই খাবারগুলো মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ ও মনে রাখার জন্য দরকারি জিনিস তৈরিতে সাহায্য করে। পড়া মনে রাখার জন্য কিছু উপকারী খাবার নিচে উল্লেখ করা হলো।  

  • সামুদ্রিক মাছঃ স্যামন, টুনা মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কোষ গড়তে ও স্মৃতিশক্তি ৪০% বাড়াতে সাহায্য করে।
  • কালোজামঃ এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন মস্তিষ্কের কোষের সংযোগ ভালো করে তথ্য মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়।
  • আখরোটঃ ওমেগা-৩ ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এই বাদাম মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায়, যা মনে রাখার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
  • হলুদঃ হলুদে থাকা কারকিউমিন স্নায়ুকোষ বাড়াতে ও নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা বাড়াতে উদ্দীপনা জোগায়।
  • ডিমঃ ডিমে থাকা কোলিন অ্যাসিটাইলকোলিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা মনে রাখার জন্য খুব দরকারি।
  • কুমড়ার বীজঃ জিঙ্ক ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ এই বীজ মস্তিষ্কের সংকেত পাঠানোর ক্ষমতা ভালো রাখে।

ব্যক্তিগত মতামতঃ পড়া মনে রাখার গোপন রহস্য

পড়া মনে রাখার গোপন রহস্য আসলে কোনো জাদুর মতো কিছু নয়, আমি এটা মন থেকে বিশ্বাস করি। এটা বরং আমাদের মস্তিষ্ককে একটু বুঝে নেওয়ার আর কিছু স্মার্ট উপায় মেনে চলার গল্প। আপনারা হয়তো ভাবেন শুধু পড়লেই মনে থাকবে, কিন্তু গবেষণা বলে সেটা যথেষ্ট নয়।

আসল সিক্রেট হলো কীভাবে পড়ছেন, কখন পড়ছেন আর শরীরের যত্ন কীভাবে নিচ্ছেন। আমার মনে হয়, মন দিয়ে সক্রিয়ভাবে পড়া, সঠিক সময়ে পড়া, পর্যাপ্ত ঘুমানো, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই হলো সেই গোপন চাবি। 

বিছানায় আরাম করে শুয়ে না পড়ে একটু কষ্ট করে সঠিক ভঙ্গিতে বসলে বা শোনার সময়টাকেও কাজে লাগালে মনে রাখার ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। ভুলে যাওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু ঠিক সময়ে রিভিশন বা অন্যকে শেখানোর চেষ্টা করলে মস্তিষ্ক দরকারি জিনিসগুলো রেখে দেয়। তাই সিক্রেট হলো নিয়ম মেনে চলা আর নিজের ব্রেনকে বন্ধু ভাবা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব বাজ ব্লগিং ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url